সজিনা পাতার উপকারিতা, সজনে পাতার পুষ্টিগুণ ও কীভাবে খাবেন

সজিনা পাতার উপকারিতা বিষয়ে আমরা সকলেই খুব কমই জানি। অনেকেই সজিনা গাছের ফল, ফুল এবং পাতা রোজকার জীবনে খেয়ে আসছেন। কিন্তু এই পাতার সঠিক ব্যবহার যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা খুব কম মানুষই জানেন।

সজিনা-পাতার-উপকারিতা

ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে অনেক ধরনের হার্টের রোগ এর জন্য কাঁচা সজিনা পাতার অনেক  উপকারিতা রয়েছে। তাই সজিনা পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং এই গাছ সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

পেজ সূচিপত্রঃ সজিনা পাতার উপকারিতা

সজিনা পাতার ২০টি উপকারিতা

সজিনা পাতার উপকারিতা বিষয়ে আজ আমরা আলোচনা করলে প্রথমেই বলতে হবে যে সজিনা পাতা একটি সুপারফুড। কারণ এমন কোন সমস্যা সমাধান নাই যার সজিনা পাতার মাধ্যমে হয় না। এ পাতা এমন একটি উপকারী গুণসম্পন্ন তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা এর সঠিক ব্যবহার এবং খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা সম্পর্কে অবগত নই। 

আমাদের জানাও জরুরী যে সজিনা পাতার কার্যকারী উপকারিতা কি। এর মধ্যে কত উপকারী গুণ রয়েছে। কারণ এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে যা মানুষের মধ্যেই থাকা জরুরী এবং এই পুষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের রোগের সমাধান পাওয়া যায়। সজিনা ফল একটি সিজনাল সবজি হিসেবে আমরা খেয়ে থাকি। কিন্তু এর পাতা সারা বছরই থাকে।  

এই পাতার উপকারী গুণ বলে শেষ করা যাবে না। আর এই পাতা আমরা শাক হিসেবে খেয়ে থাকি। আমাদের দেশে সাধারণত এ গাছ ডালের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। আর বাংলাদেশের জন্য এ গাছটি খুবই উপযোগী। এ গাছের পর্যাপ্ত বৃদ্ধির জন্য এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত ডাল লাগাতে হয়।  

বিভিন্ন উপকারী সবজি বা খাবারের তুলনায় পুষ্টিগুণ সজিনা পাতায় বেশি থাকে। এর ফুড ভ্যালু, নিউট্রিশন এবং ভিটামিন যে পরিমাণে রয়েছে তা আপনাকে বিস্মিত করবে। সজিনা পাতার উপকারিতা যে কি পরিমান সে বিষয়ে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই, তাই এ বিষয়ে ২০ ধরনের উপকারিতা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

  • সজিনা পাতা হৃদরোগের জন্য মহা ওষুধ হিসেবে কাজ করে। যারা হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত সজিনা পাতা খেলে রোগের সমাধান পাবেন। এই পাতা উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিদিন নিয়মিত সজিনা পাতা গুলিয়ে খেলে অবশ্যই সমাধান পাবেন। 
  • এক টেবিল চামচ সজিনা পাতার গুড়া ব্যবহার করলে শিশুদের আমিষ, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়ে যায়। তাই বাচ্চাদের কেউ এই গুড়া খাওয়ানো উচিত। এতে করে যেসব বাচ্চারা পুষ্টির অভাবে ভুগছে তাদের ঘাটতি পূরণ হবে। তাছাড়া অনেকেই রয়েছেন টাকা পয়সার অভাবে শিশুদের পুষ্টির অভাব পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছেন না তাদের জন্য এই সমাধানটা খুবই জরুরী।
  • গর্ভবতী মায়েদের জন্য দৈনিক যদি ছয় চামচ সজনে পাতার গুড়া খাওয়ানো যায় তবে তাদেরও ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের চাহিদা পূরণ হবে। এ পাতায় এতটাই উপকারী যে গর্ভাবস্থায় মায়েদেরকে খাওয়ার জন্য কোন বিধি-নিষেধ নেই।
  • ডায়াবেটিসের ওষুধ হিসেবে সজিনা পাতাকে নির্দেশ করা হয়। বর্তমানে অনেক মানুষই ডায়াবেটিসের জন্য সজিনা পাতার গুড়া বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছেন।
  • এলার্জির সমস্যা আমাদের প্রত্যেকেরই কম-বেশি হয়ে থাকে। এই সমস্যা সমাধানের উপায় সজিনা পাতার মাধ্যমে পাওয়া যায়। আক্রান্ত স্থানে সজিনা পাতা বেটে প্রলেপ দিয়ে দিলে রোগ সারানো সম্ভব হয়।
  • পেটের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা প্রদাহের সমস্যা থাকলে পাতা খুবই ভালো কাজ করে। এর কারণে প্রত্যেক দিন সকালে এক চামচ সজিনা পাতার রস যদি খাওয়া যায় তবে অবশ্যই পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।
  • খুবই আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে যাদের বাতের ব্যথা বা গেটে ব্যথা থাকে তাদের জন্য এই সজিনা পাতা কাজ করে। সজিনা পাতা বেটে যদি ব্যথা জায়গায় দিয়ে রাখা যায় তবে ব্যথা থেকে মুক্তি মেলে।
  • সজিনা পাতা ছাড়াও সজিনা ফুল পেটের সমস্যা বা হজমের সমস্যা এমনকি কোষ্টকাঠিন্য দূর করে। সজিনা গাছের কোন অংশই ফেলে দেওয়ার নয়। এমনকি সজিনা গাছের ফুল বড়া বানিয়েও খেয়ে ফেলা যায়। তাও অনেক সুস্বাদু।
  • অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে সজিনা পাতা খুবই ভালো কাজ করে। সজিনা পাতার রস যদি কোন আক্রান্ত স্থানে দিয়ে রাখা যায় তবে মুক্তি মিলে এবং ব্যথা কমে যায়। কোন পোকামাকড় কামড় দিলেও সেই জায়গায় এই রস দিতে পারেন।
  • আমরা সকলেই কমবেশি কৃমির সমস্যায় ভুক্তভোগী। কৃমির সমস্যা হলে পেটের অনেক রকম রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। সেই সমস্যা সমাধানের জন্য সজিনা পাতা কাজ করে। কারণ এই পাতা কৃমি নাশক হিসেবে কৃমির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত সজিনা পাতা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে অন্য কোন রোগ বাসা বাঁধতে পারে না। শরীরের আয়রনের অভাব পূরণ হলে শরীর সুস্থ থাকবে।
  • আমাদের অনেকেরই অনেক রকম সমস্যা দেখা দেয়। অথবা অনেকের হাড় মজবুত নয়। তাদের জন্য পাতার গুড়া খাওয়া জরুরি। কারণ হাড়ের কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে এই সজিনা পাতা।
  • যকৃত এবং কিডনির কোন সমস্যা দেখা দিলে সজিনা পাতার গুড়া বা রস খাওয়া জরুরী। কিডনির পাথর মুক্ত করার জন্য এবং পাথর তৈরি বন্ধ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে নিয়মিত এই পাতা খাওয়া। এতে শরীরের ওই অংশগুলোর সমস্যার সমাধান হয়। কিডনি এবং লিভারের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • অনেক মায়েদের বাচ্চা হওয়ার পর বুকের দুধের পরিমাণ কম থাকে। তাদের জন্য নিয়মিত ওই গর্ভাবস্থায় বেশি করে সজিনা পাতার গুড়া খাওয়া অত্যাবশ্যক। এতে বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে এবং বাচ্চা সুস্থ থাকবে।
  • আমরা অনেকেই ওজন কমাতে আগ্রহী। কিন্তু জানিনা কিভাবে ওজন কমাতে হবে। তাদের সুবিধার ক্ষেত্রে নিয়মিত সজিনা পাতার গুড়া খেলে উপকার পাবে। সজিনা পাতার শাক এছাড়া সজিনার ফল সবজি হিসেবে খেলে ওজন কমতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ সোনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে এবং শরীরকে আরো বেশি স্বাস্থ্যকর করে তোলার জন্য মিরাক্কেল ট্রি অথবা সজিনা পাতার গুরুত্ব অপরিসীম। শুধু পাতা নয় এর ডাটা ফুল খেয়েও উপকার পাওয়া সম্ভব। 
  • রক্তের বিভিন্ন রকম সমস্যা সজিনা পাতা খেলে সমাধান হয়। অনেকের রক্তচাপ জনিত সমস্যা থাকে তাদের জন্যও সজিনা পাতা খাওয়া জরুরী। এক্ষেত্রেও সজিনা পাতা রান্না করে অথবা গুলিয়ে ভারী খাওয়ার পরে যদি নিয়মিত খাওয়া যায় তবে শরীরের রক্তচাপ অনেকটাই কমে যায়। এবং সেটা অবশ্যই নিয়মিত খেতে হবে।
  • ক্যান্সার যার কোন ঔষধ এখন পর্যন্ত নেই সেই রোগের সমাধানও এই সজিনা পাতায় রয়েছে। সজিনা পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। যেমন নিয়াজিমিশিন, যা ক্যান্সার রোধে বিশেষ উপকারী। এই যৌগ ক্যান্সার কোষ কে বিকশিত হতে দেয় না।
  • সব ধরনের সমস্যা ছাড়াও চোখের সমস্যার সমাধানেও এই পাতা খুবই উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা ক্যারোটিন এই পাতায় অবস্থান করে যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। চোখের রোগ প্রতিরোধের জন্য এবং সমাধানের সুবিধার্থে এই পাতা নিয়মিত খাওয়া জরুরী।
  • শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য সজিনা পাতা বিশেষ উপকারী। রক্তশূন্যতা বা আয়রনের অভাব থাকলে শরীরে অনেক ধরনের রোগ বাসা বাঁধে এবং শরীর অনেক অসুস্থ থাকে। এসব ক্ষেত্রে নিয়মিত সজিনা পাতা খেতে হবে।

সজিনা পাতার সঠিক ব্যবহার

সজিনা পাতার সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকেরই জানা উচিত। কারণ এ পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সকলেই কম বেশি জানি কিন্তু কিভাবে খাব বা নিয়ম কি তা আমরা সঠিকভাবে জানিনা। তাই মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক নিয়ম আমাদেরকে জানতে হবে। পুরো বছর ধরে যদি সজিনা পাতার রস বানিয়ে খাওয়া যায় তবে সেটাতে বেশি উপকার পাওয়া যায়। 

আরও উপাদান মিক্স করে এর স্বাদ বাড়িয়ে খেলে রুচি বাড়বে। এছাড়া রস না করেও যদি সরাসরি রান্না করে বা ভর্তা বানিয়ে খাওয়া যায় তবে সেটাও সম্ভব। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই কচি এবং কাঁচা পাতা হলে ভালো। পাতা সিদ্ধ করে বিভিন্ন ধরনের উপাদান যা ভর্তায় লাগে যেমন পেঁয়াজ রসুন কাঁচা মরিচ একসাথে মিশিয়ে খেলে খুবই সুস্বাদু একটি ভর্তা তৈরি হয়।   

এছাড়া সবচেয়ে উপকারী আরো একটি উপায় হচ্ছে গুড়া করে খাওয়া। একটি সিজনে পাতা রোদে শুকিয়ে তারপর এটিকে ব্লেন্ড করে গুড়া করে নিলেই সারা বছর ধরে এটি সংরক্ষণ করে রাখা যায়। নষ্ট হয় না এবং প্রতিদিন সকালে বা বিকালে দুই চামচ গুরা গুলিয়ে খেয়ে ফেলা যায়। এতে সব ধরনের সমস্যার সমাধান হবে। 

এছাড়া চায়ের মত এই পাতা খাওয়া সম্ভব। পাতা পানিতে জাল দিয়ে যদি প্রতিদিন খাওয়া যায় তাতে উপকার পাওয়া যাবে। সজিনা পাতা অবশ্যই প্রতিদিন না খেয়ে মাসে ১৫ দিন খেলে উপকার বেশি পাওয়া যাবে এবং শরীর ভালো থাকবে।

সজিনা পাতার ঔষধি গুণাবলী

সজিনা পাতার ঔষধি গুন বলে শেষ করা যাবে না। সজিনা পাতা যেহেতু অনেক ধরনের রোগের মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে তাই এর উপকারিতা ব্যাপক। আমরা উপরে উপকারিতা সম্পর্কে অনেক আলোচনা করেছি। সেখানে ঔষধি গুন সম্পর্কেও আমরা ধারণা পেয়েছি। যেহেতু সজিনা পাতা পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব হিসেবে অন্যতম। 

সজিনা-পাতার-ঔষধি-গুণাবলী

গবেষকরা এটিকে সুপার ফুড হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তাই এটি শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকর। এছাড়া অনেক ধরনের পুষ্টিকর খাবারের থেকেও এর পুষ্টির পরিমাণ খুবই বেশি। যেমন লেবুতে যে পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে এর থেকে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি সজিনা পাতায় পাওয়া যায়। 

তাই লেবু না খেলেও যদি আপনি ভিটামিন সি পূরণ করার জন্য সজিনা পাতা খান তবে বেশি পুষ্টি পাবেন। আর শরীরের উন্নতির জন্য ভিটামিন সি খুবই জরুরী। সজিনা পাতায় দুইগুণ পরিমাণ বেশি প্রোটিন থাকে ডিমের তুলনায় এবং দুধের চেয়েও চার গুণ পরিমাণ বেশি প্রোটিন থাকে। তারমানে যারা দুধ এবং ডিম খাওয়ার সুযোগ পান না বা খেতে পারেন না তারা সজিনা পাতা খেলে উপকার পাবেন।

বিভিন্ন ধরনের শাক খেলে যতটা উপকার পাওয়া যায় তার থেকে ২৫ গুন বেশি উপকার পাবেন এই সজিনা পাতার শাক থেকে। তাই শরীরের পুষ্টির চাহিদা খুব তাড়াতাড়ি পূরণ করা যায়। পাতায় পর্যাপ্ত পরিমাণ জিংক থাকায় হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে খুবই সাহায্য করে। এছাড়াও হাজার বছর ধরে তিনশরও বেশি ধরনের রোগের সমাধান এই সজিনা পাতা খাওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায়। 

সজিনা পাতার পুষ্টিগুণ

সজিনা পাতার উপকারিতা থেকে আমরা ধারণা নিতে পারি যে এর পুষ্টিগুণ কতটা ব্যাপক। বিভিন্ন রোগ ছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজিনা পাতার সকল উপকারিতা সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এসব থেকে বোঝা যায় যে সজিনা পাতার কতটা উপকারী উপাদান রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ, যৌগ, ভিটামিন রয়েছে এ পাতায়। 

ক্যালসিয়াম, জিংক, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এই উপাদান গুলো রয়েছে এছাড়াও প্রোটিন, কার্বোহাইড্র এবং আয়রনও পাওয়া যায়। অনেক ধরনের পুষ্টিকর উপাদান একসাথে এই একটি পাতাতেই পাওয়া যায়। যার কারণে কোন সমস্যার সমাধানের জন্য সজিনা পাতা একমাত্র সমাধান। 

মাত্র ১০০ গ্রাম সজিনা পাতাতেই অনেকটুকু পরিমাণে উপকারী উপাদান পাওয়া সম্ভব। নিচে তা দেওয়া হল।

  • ফাইবার ২ গ্রাম
  • প্রোটিন ৯.৪০ গ্রাম
  • লৌহ ৪ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন সি ৫১.৭ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন এ ৩৭৮ মাইক্রগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম ১৪৭ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম ১৮৫ মিলিগ্রাম
  • স্নেহ ১.৪ গ্রাম

সজিনা পাতার কিছু উপকারিতা বিষয়ক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ সজিনা পাতা খাওয়া কি উপকারি?

উত্তরঃ সজিনা পাতার উপকার বলে শেষ করা যাবে না। সুদূর প্রাচীনকাল থেকে ৩০০ এরও বেশি রোগের সমাধান এই সজিনা পাতা থেকে আসে। শরীরের ব্যথা, জ্বর বা এলার্জি বা যেকোনো ধরনের সমস্যা যা ভেতরে বাইরে হয় তার বেশিরভাগ সমাধানই সজিনা পাতা থেকে পাওয়া যায়।

প্রশ্নঃ সজিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম কি?

উত্তরঃ সজিনা পাতার খাওয়ার নিয়ম এবং এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে আমরা উপরে আলোচনা করেছি। মূলত রান্না করে বা জুস বানিয়ে অথবা গুড়া সরাসরি খেয়ে ফেলা যায়। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের রেসিপি এই সজিনা পাতা থেকে তৈরি করে খাওয়া সম্ভব।

প্রশ্নঃ প্রতিদিন সজিনা পাতা খাওয়া কিভাবে সম্ভব?

উত্তরঃ প্রতিদিন সজিনা পাতা খাওয়া ঠিক নয়। বরং একদিন পরপর বা মাসে ১০ থেকে ১৫ দিন সজিনা পাতা খেতে হবে। আর সজিনা পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে গুড়া করে পানিতে গুলিয়ে সেবন করা। 

গুড়া সজিনা পাতার ব্যবহার

সজিনা পাতার বৈশিষ্ট্য থেকে আমরা এটা বুঝতে পেরেছি যে এই পাতা যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন তা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে সজিনা পাতার পাউডার খাওয়ার ব্যাপারে সুবিধা বেশি। সজিনা পাতার গুড়া খাওয়ার উপকারিতা বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই সারা বছরের জন্যই সজিনা পাতা গুড়া করে রেখে দিতে পছন্দ করেন।  

কারণ গুড়া সজিনা পাতা খাওয়ার জন্য প্রসেস করতে সময় কম লাগে এবং খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করা যায়। সজিনা পাতার গুড়া যেকোনো ভাবেই খাওয়া সম্ভব। প্রয়োজনে প্রতিদিন পানিতে গুলিয়ে এই গুড়া খাওয়া যায় তবে অবশ্যই পানিতে গুলিয়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টার জন্য রেখে দিতে হবে। 

অথবা এইগুলো পরবর্তীতে ভর্তা হিসেবেও পেঁয়াজ কাঁচামরিচ ও রসুনের সাথে ভর্তা করে ভাত দিয়ে খাওয়া সম্ভব। মূলত সজিনা পাতার রস বা অন্য কোন প্রসেস তৈরি করার জন্য অনেক সময় লাগে কিন্তু পাতা যদি গুড়া করে রাখা যায় তবে খাবার জন্য রেডি করতে বিশেষ কোন ব্যবস্থা করতে হয় না। তাই গুড়া করে রাখা সজিনা পাতা ব্যবহার করতে বা খেতে বেশি সুবিধা হয়। 

সজিনা পাতা গুড়া করার প্রসেস খুবই সহজ। প্রথমে গাছ থেকে পাতাগুলো সংগ্রহ করতে হবে এবং সেটা ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে। রোদে শুকিয়ে যখন পাতা শুকিয়ে ঝড়ঝরে হয়ে যাবে তখন ব্লেন্ড করে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। এটা খুবই উপকারী এবং বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় তাই ঝামেলা বিহীনভাবে গুঁড়ো করে রাখলেই খেতে বেশি সুবিধা হয়। 

অবশ্যই বাজার থেকে কেনার চেয়ে বাসায় পরিষ্কার স্বাস্থ্যসম্মতভাবে এই গুড়া প্রিপারেশন করাই সবচেয়ে ভালো। গুড়া তৈরি করার পর দুধ দিয়ে বা পানি দিয়ে অথবা চায়ের মতো বানিয়ে এমনকি পরবর্তীতে জুস বানিয়ে খেয়ে ফেলা যায়।

সজিনা পাতার রস এর উপকারিতা

সজিনা পাতা রস বানিয়ে ব্যবহার করা খুবই উপকারী। বিভিন্ন কারণে এই রস বানানোর প্রয়োজন হতে পারে। আমরা প্রথমে সজিনা পাতার গুড়া তৈরি করার প্রসেস সম্পর্কে জেনেছি। কারণ সজিনা পাতার গুড়া করে রাখলে পরবর্তীতে এইটা দিয়ে জুস বানানো সহজ হয়। সজিনা পাতার জুস নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে খুবই উপকার পাবে কারণ তা উপাদেও একটি পানীয়।

প্রতিদিন খাওয়ার জন্য ভেষজ একটি খাবার হবে যা কিনা শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। অনেক সুস্বাদুভাবে সজিনা পাতা রস এর জুস বানিয়ে খাওয়া সম্ভব। যা টেস্টের দিক থেকে অতুলনীয়। গুড়া না থাকলেও সজিনা পাতা দিয়েও সরাসরি জুস বানিয়ে খাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে পাতা পরিষ্কার করে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।  

অবশ্য সাথে কিছু পানি যুক্ত করতে হবে আর টেস্টের জন্য জিরা, আদা, বিট লবণ ছাড়াও বেশ কিছু উপাদান দেওয়া যায়। এগুলো দিয়ে আবার সুন্দর করে ব্লেন্ড করে ছেঁকে পরিবেশন করতে পারবেন এবং প্রয়োজনে মিষ্টির জন্য মধু মিশাতে পারেন। এটি খুবই উপকারী এবং সুস্বাদু একটি জুস হবে। যা আপনারা প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। 

সাজনা পাতার অপকারিতা

সাজনা পাতার অপকারিতা সজিনা পাতার উপকারিতার মধ্যেও অপকারিতার বিষয়টি চলে আসে। কোন খাবারই সেটা যতই পুষ্টিকর হোক না কেন অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা উচিত নয়। তেমনি ভাবে সজিনা পাতাও বেশি খাওয়া যাবেনা। অবশ্যই প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম সজিনা পাতা খেতে হবে। এর বেশি সেবন করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং প্রতিদিন না খেয়ে একদিন পরপর খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। 

সজিনা-পাতার-অপকারিতা

এতে শরীর ভালো থাকবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিকভাবে চলতে থাকবে। তাছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে পাতা গ্রহণ করে ফেললে শরীর খারাপ হতে পারে। যেমন বমি বমি ভাব হতে পারে, আমাশয় হতে পারে, বা ক্ষুদা মন্দা দেখা দিতে পারে। 

সজিনা পাতা যেহেতু ব্লাড প্রেসার কমায় তাই বেশি খেয়ে ফেললে প্রেসার একদম লো হয়ে যেতে পারে। এটিও শরীরের জন্য খারাপ। তাই অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী পরিমাণ মতো সজিনা পোতা সেবন করা জরুরী।

বিশেষ সর্তকতা সজিনা পাতা খাওয়ার জন্য

সজিনা পাতার খাওয়ার জন্য আরও বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ অতিরিক্ত সজিনা পাতা গ্রহণ করলে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সজিনা পাতা যেমন শরীরের জন্য উপকারী তেমনি সজিনা পাতা খাবার ব্যাপারে সাবধান থাকার জরুরি। 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা যেটা সেটা হচ্ছে সজিনা পাতা সংগ্রহ করার সময় আমরা এর সাথে এর ডালগুলো ব্যবহার করে ফেলি। কিন্তু এই ডালগুলো ক্ষতিকর। শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমে বাধা আসে এর জন্য। আবার গর্ভকালীন সময়ে সজিনা পাতার ডালের বিষাক্ত উপাদান গুলো শরীরে আসলে শরীরের ক্ষতি হয়। তাই গর্ভকালীন সময়ে এই পাতা খাওয়া যাবেনা। 

অনেকে মনে করেন যে সজিনা পাতার গুড়া খেলেই ডায়াবেটিকস সেরে যাবে। না অবশ্যই সজিনা পাতার গুড়া খাওয়ার সাথে ডায়াবেটিকস কন্ট্রোল করার অন্যান্য রুটিন ফলো করতে হবে। কিডনির সমস্যা সমাধানের জন্য অবশ্যই সজিনা পাতার উপর একমাত্র ভরসা করলে চলবে না। সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ মত নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে। 

সজিনা পাতার বিশেষ উপকারিতা বিষয়ক আরো কিছু প্রশ্ন

প্রশ্নঃ সজিনা পাতা খেলে কি ডায়াবেটিস কন্ট্রোল হয়?

উত্তরঃ ডায়াবেটিকস কন্ট্রোলের জন্য সজিনা পাতা খুবই ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে উপকারী উপাদান রয়েছে যা রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রশ্নঃ সজিনা পাতার সাথে কি চিনি মিশিয়ে খাওয়া যাবে?

উত্তরঃ সজিনা পাতার জুস বানিয়ে খেলে খুবই উপাদেও একটি পানিয় তৈরি হয়। কিন্তু স্বাদ বাড়ানোর জন্য মধু মিশানো যায় তবে চিনি মিশানো ঠিক নয়। কারণ চিনি শরীরের জন্য ভালো নয়।

প্রশ্নঃ সজিনা পাতা কি গর্ভবতী মহিলারা খেতে পারবে?

উত্তরঃ সজিনা পাতা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এর ডালে যে ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে তা গর্ভবতী মহিলারা গ্রহণ করলে সমস্যা দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় না খাওয়ার পরামর্শ ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন। তবে বাচ্চা হওয়ার পর দুধের পরিমাণ বাড়াতে এই পাতা খাওয়া যেতে পারে।

প্রশ্নঃ চোখের উপকারের জন্য কি সজিনা পাতা জরুরী?

উত্তরঃ চোখের উপকারের জন্য সজিনা পাতা খাওয়া যেতে পারে। কারণ সজিনা পাতায় রয়েছে চোখের জন্য উপকারী এমন কিছু উপাদান যার চোখের সমস্যা সমাধান করে এবং চোখ ভালো রাখে।

সজিনা পাতার উপকারিতা বিষয়ে লেখকের মন্তব্য

আজকে আমরা সজিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সজিনা পাতা যেহেতু সকল রোগের মহা ঔষধ এবং এর উপকারীরা বলে শেষ করা যায় না আর এর বিশেষ ধরনের ব্যবহার বিধি রয়েছে এবং খাবার নিয়ম সম্পর্কেও অনেক ধরনের লিস্ট লক্ষ্য করা যায় তাই অবশ্য সবকিছু জেনে রাখা জরুরী।

সজিনা পাতা যেহেতু বাংলাদেশে সব অঞ্চলেই দেখতে পাওয়া যায় তাই এর খাবার সম্পর্কে যদি আমরা সঠিক ধারণা রাখি তবে আমাদের অনেক ভেষজ উপায়ে রোগের সমস্যার সমাধান হবে। আবার একইভাবে সজিনা পাতার খাবার এবং পরিমাণ মতো গ্রহণ করার বিষয়েও সাবধতা অবলম্বন করা জরুরি। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফোকাস আইটি ইনস্টিটিউট এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url