বিড়ালের নখের আচরে কি সমস্যা হয় রোগের লক্ষণ এবং টিকা

বিড়ালের নখের আচরে কি সমস্যা হয় আপনি কি জানেন? বিড়াল প্রেমিদের একটি কমন প্রশ্ন হলো বিড়ালের নখের আচরে কি সমস্যা হয়? আঁচড় খাওয়ার অভিজ্ঞতা প্রায় সকল বিড়াল মালিকের থাকে। যদিও বিড়াল একটি আদুরে প্রাণী, দুর্ঘটনাবশত তার নখের আচরে শরীরের নানা জায়গায় কেটে যেতে পারে। 

বিড়ালের-নখের-আচরে-কি-সমস্যা-হয়

কখনো কখনো বিড়াল ক্ষিপ্ত হলে কামড়ও দিতে পারে, যা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আচর খাওয়ার পর অনেকেই জানেন না কী করবেন। কিছু মানুষ জলাতঙ্কের ভয়েও ভোগেন। তবে চিন্তার কিছু নেই। এই আর্টিকেলে আমরা বলব, এমন পরিস্থিতিতে কী করা উচিত এবং তাৎক্ষণিকভাবে কিভাবে প্রতিকার করবেন।

পেজ সূচিপত্রঃ বিড়ালের নখের আচরে কি সমস্যা হয়

বিড়ালের নখের আচরে কি সমস্যা হয়

বিড়ালের নখের আচরে কি সমস্যা হয়, বিড়ালের নখের আচরের কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে, এবং তা কখনো কখনো বেশ গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল বা যাদের এলার্জি রয়েছে, তাদের জন্য এটি বড় সমস্যা হতে পারে। 

বিড়ালের আচরের কারণে শরীরে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং অন্যান্য জীবাণু প্রবেশ করতে পারে যা থেকে সংক্রমণ বা রোগের সৃষ্টি হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি সমস্যা হতে পারেঃ

ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজঃ প্রথমত, বিড়ালের নখের আঁচড় থেকে "ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ" (CSD) নামে পরিচিত একটি রোগ হতে পারে। এই রোগটি বার্টোনেলা হেনসেলি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা বিড়ালের নখ এবং লালায় থাকতে পারে। 

সাধারণত, বিড়ালের নখের আচরের জায়গায় প্রাথমিকভাবে লালচে দাগ, ফোলাভাব বা ব্যথা দেখা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই জায়গা থেকে ইনফেকশন ছড়াতে পারে এবং লসিকা গ্রন্থি (লিম্ফ নোড) ফুলে যেতে পারে। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিকভাবে সেরে যায়, তবে গুরুতর ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

এলার্জিক প্রতিক্রিয়াঃ দ্বিতীয়ত, বিড়ালের নখের আচরের কারণে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যাদের ত্বক সংবেদনশীল বা এলার্জি প্রবণ, তাদের ক্ষেত্রে বিড়ালের নখের আঁচড় বা লালা ত্বকে স্পর্শ করলে তীব্র চুলকানি, ফোলাভাব, লালভাব বা ত্বকের ক্ষত হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দ্রুত মেডিকেল সেবা নেওয়া প্রয়োজন।

আরো পড়ুনঃ সজিনা পাতার উপকারিতা, সজনে পাতার পুষ্টিগুণ ও কীভাবে খাবেন

মাংসপেশী ক্ষতিগ্রস্থঃ তৃতীয়ত, যদি আচরের ফলে ত্বকের গভীরে চোট লাগে, তবে ত্বক ছাড়াও মাংসপেশী বা নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা বা স্নায়ুজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিড়াল আঁচড় দিলে প্রাথমিক অবস্থায় কি করবেন 

বিড়ালের নখের আচরে কি সমস্যা হয় বিড়ালের আঁচড় বা কামড় অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক তৈরি করে। জলাতঙ্কের আশঙ্কায় অনেকেই দ্রুত ডাক্তারের কাছে গিয়ে ইনজেকশন নেন। আবার কেউ কেউ মারাত্মক কামড়কেও গুরুত্ব না দিয়ে ঘরে বসে থাকেন। আসলে কী করা উচিত, তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

প্রথম ধাপঃ ক্ষত পর্যালোচনা প্রথমেই দেখুন আপনার আঘাত কতটুকু। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, বিড়ালের আঁচড় খুবই হালকা হয় এবং রক্ত বের হয় না। এই ধরনের আঘাতে সাধারণত ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই।

কিন্তু যদি আঁচড় গভীর হয়, তাহলে সতর্ক হওয়া জরুরি। আর যদি বিড়াল কামড় দিয়ে থাকে, তবে সেটি একেবারেই উপেক্ষা করা যাবে না।

দ্বিতীয় ধাপঃ সাবান ও পানির ব্যবহার অনেকেই ভাবতে পারেন সাবান-পানি তেমন কাজে আসবে না, তবে সত্য হলো, জলাতঙ্ক ভাইরাস ঠেকাতে সাবান-পানির ব্যবহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জলাতঙ্ক ভাইরাসের চারপাশে স্নেহ-জাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে, যা সাবানের মাধ্যমে ধ্বংস করা যায়। তাই যেকোনো গভীর ক্ষত সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

তৃতীয় ধাপঃ এন্টিবায়োটিক ব্যবহার ও রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ ক্ষত জীবাণুমুক্ত রাখতে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করুন। স্যাভলন, ডেটল বা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড সলিউশন ১০ সেকেন্ডের জন্য প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাবেন। যদি রক্তপাত হয়, তাহলে ব্যান্ডেজ বা গজ ব্যবহার করে রক্তপাত বন্ধ করুন। তবে রক্ত বন্ধ হলে ব্যান্ডেজ খুলে দিন, যাতে বাতাস চলাচল করে এবং টিটেনাসের জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে না পারে।

চতুর্থ ধাপঃ  সংক্রমণ চিহ্নিতকরণ ক্ষত গভীর না হলেও সংক্রমণের লক্ষণগুলো লক্ষ্য করুন। যদি ক্ষত ফুলে যায়, লাল হয়, ব্যথা করে বা রক্তপাত থামে না, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান।

পঞ্চম ধাপঃ জ্বরের লক্ষণ বড়দের ক্ষেত্রে সমস্যা না হলেও, বাচ্চাদের বিড়ালের আচরে জ্বর হতে পারে, যাকে ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ বলা হয়। এই রোগে বাচ্চাদের শরীরে ফোসকা পড়া, পিঠ বা পেট ব্যথা, এবং জ্বর হতে পারে। এই লক্ষণগুলো সাধারণত আচরের ৭-১৪ দিনের মধ্যে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ষষ্ঠ ধাপঃ গভীর ক্ষত বা মুখের আঘাত যদি ক্ষত খুব গভীর হয় বা মুখে হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার আপনার ক্ষত ভালোভাবে পরিষ্কার করবেন এবং প্রয়োজনে আরও চিকিৎসা প্রদান করবেন।

বিড়ালে আচর দিলে কি দোয়া পড়তে হয়

বিড়ালের আচর বা বিষাক্ত প্রাণীর কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সতর্ক থাকা প্রয়োজন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বিশেষ দোয়া শিখিয়েছেন যা বিষাক্ত প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। 

বিড়ালে-আচর-দিলে-কি-দোয়া-পড়তে-হয়

যিনি নিয়মিত সকাল ও সন্ধ্যায় এই দোয়া পাঠ করবেন, আল্লাহ তাআলা তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন এবং তাকে হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে হেফাজত করবেন। বিড়ালের আচরের ক্ষেত্রেও এই দোয়া পাঠ করা যেতে পারে। বিষাক্ত প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য হাদিসের আলোকে দোয়াটি নিম্নরূপঃ 

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় এই দোয়া তিনবার পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে সাপ, বিচ্ছু ও অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণীর কামড় থেকে রক্ষা করবেন। (তিরমিজি হাদিস ৩৬০৪)

**বিড়ালের আচরের জন্য দোয়া:**

**আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খলাক।**

অর্থাৎঃ "আমি আল্লাহর পূর্ণ কালেমার মাধ্যমে প্রতিটি শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং দুষ্টু দৃষ্টির থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।"

অতিরিক্ত সতর্কতা

উপরের বিষয়গুলো ছাড়াও কিছু অতিরিক্ত সতর্কতা মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন:

এলার্জির সমস্যাঃ যদি আপনার বিড়ালের প্রতি এলার্জি থাকে, তাহলে বিড়ালের কাছ থেকে দূরে থাকুন। কারণ বিড়ালের আচরে চামড়ায় বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও বিড়ালের লোম থেকে শ্বাসকষ্টের ঝুঁকিও থাকতে পারে, বিশেষ করে যারা এলার্জিতে ভুগছেন।

গর্ভবতী মায়েদের সতর্কতাঃ বিশেষত গর্ভবতী মায়েদের বিড়ালের মল থেকে দূরে রাখা উচিত। কারণ এর মাধ্যমে টক্সোপ্লাজমোসিস নামক একটি ভয়ানক রোগ ছড়াতে পারে। এই রোগে গর্ভবতী মায়েদের ফ্লুর মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে, তবে এর প্রভাব গর্ভের শিশুর ওপর মারাত্মক হতে পারে। শিশু মস্তিষ্কে সংক্রমণ (এনসেফালাইটিস), হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, চোখ বা কানে জন্মগত ত্রুটির শিকার হতে পারে। তাই এই বিষয়ে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।

আরো পড়ুনঃ সোনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, সোনা পাতার ঔষধি গুণাবলী

ভ্যাক্সিনের গুরুত্বঃ পশুপ্রেমীদের জন্য চিন্তার কিছু নেই, কারণ জলাতঙ্কের প্রতিষেধক ভ্যাক্সিন রয়েছে। আপনার পোষা প্রাণীর সুরক্ষার জন্য নিয়মিত ভ্যাক্সিন দেওয়া উচিত। নিকটস্থ পশু চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পোষা বিড়ালকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধক টিকা দিন।

বিড়ালের আচরে জলাতঙ্কের ভয়াবহতা

পোষা বিড়াল কামড়ালে বা আঁচড় দিলে সেটি কখনোই নিরাপদ নয়। বিশ্বে প্রতি ৯ মিনিটে একজন এবং বছরে ৫৯ হাজার মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এর মধ্যে ৯৫% মানুষ এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে। বাংলাদেশে জলাতঙ্ক রোগের কারণে মৃত্যুর হার দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ। এ রোগের মৃত্যুর হার শতভাগ। তাই জলাতঙ্ক থেকে বাঁচতে সতর্কতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

লেখকের শেষকথাঃ বিড়ালের নখের আচরে কি সমস্যা হয়

বিড়ালের নখের আচরে কি সমস্যা হয় বিড়ালের নখের আচরে সামান্য থেকে গুরুতর সমস্যা হতে পারে। আচরের ফলে ত্বকের সংক্রমণ, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ হতে পারে। তাই, বিড়ালের আঁচড় থেকে সুরক্ষার জন্য সময়মতো পরিষ্কার এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। 

যদি ক্ষত গভীর হয় বা সংক্রমণ দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিড়ালের নিয়মিত পরিচর্যা এবং পরিষ্কার রাখা সংক্রমণ কমাতে সহায়ক। সব সময় সতর্ক থাকলে ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফোকাস আইটি ইনস্টিটিউট এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url